হারের স্বাদ ভুলতে বসা আর্জেন্টিনাকে যেন এক ঝটকায় মাটিয়ে নামিয়ে আনল সৌদি আরব। লিওনেল মেসির রেকর্ড গড়া গোলে শুরুটা প্রত্যাশিতই হয় লিওনেল স্কালোনির ‘অজেয়’ দলের। প্রথমার্ধে আরও তিনবার জালে বল পাঠায় তারা; কিন্তু সবগুলো আটকে যায় অফসাইডের ফাঁদে। এরপরই বিস্ময় হয়ে ধরা দেয় সৌদি আরব। পাঁচ মিনিটের মধ্যে দুই গোল করে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের স্তব্ধ করে দিল এশিয়ার দেশটি।
লুসাইল স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার ‘সি’ গ্রুপের ম্যাচে সবাইকে অবাক করে দিয়ে ২-১ গোলে জয় তুলে নেয় সৌদি আরব। ৩৬ ম্যাচ পর হারের তেতো স্বাদ পেল আর্জেন্টিনা। এতে তাদের দ্বিতীয় রাউন্ডের পথটা হয়ে গেল কঠিন।
দ্বিতীয়ার্ধে গতিময় ফুটবলে বাজিমাত করে সৌদি আরব। অবশ্য কোপা আমেরিকার বর্তমান চ্যাম্পিয়নরাও শুরুর দাপট ধরে রাখতে পারেনি পরের অর্ধে। হতাশাজনক ফুটবলে ১৯৭৪ সালের পর প্রথমবার বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ২ গোল হজম করল আর্জেন্টিনা।
ডিফেন্স অনেক উপরে এনে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়েছিল সৌদি আরব। আনহেল দি মারিয়া-লাউতারো মার্তিনেসরা অফসাইড ফাঁদ এড়াতে পারেনি। এগিয়ে যাওয়ার পর সৌদি আরব রক্ষণও সামাল দিয়েছে দারুণ দৃঢ়তায়।
আক্রমণাত্মক শুরুর পর দ্বিতীয় মিনিটেই গোলের জন্য প্রথম শট নেন মেসি। দূরের পোস্ট লক্ষ্য করে নেওয়া শট যতটা বাঁকাতে চেয়েছিলেন ততটা পারেননি। ঝাঁপিয়ে ব্যর্থ করে দেন মোহামেদ আল-ওয়াইস।
দশম মিনিটে ঠাণ্ডা মাথার স্পট কিকে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে নেন মেসি। একদিকে ডাইভ দেওয়ার ভান করে আগেভাগেই আরেক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েন সৌদি গোলরক্ষক। গড়ানো শটে পোস্ট ঘেঁষে বল জালে পাঠান আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। বিশ্বকাপে তার সপ্তম গোল।
এই গোলে একটি কীর্তিও গড়া হয়ে গেল মেসির। দেশের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের চারটি ভিন্ন আসরে গোল করলেন তিনি।
এই নিয়ে সবশেষ ৫ ম্যাচে মেসির গোল হলো ১১টি, জাতীয় দলের হয়ে সব মিলিয়ে ৯২টি।
কর্নারের সময়ে ডি-বক্সে সৌদি আরবের একজন ফাউল করায় ভিএআর দেখে পেনাল্টি দিয়েছিলেন রেফারি।
শুরুতেই পিছিয়ে পড়া সৌদি আরব জবাব দেয় আক্রমণাত্মক ফুটবলে। প্রতি-আক্রমণ থেকে ২২তম মিনিটে আবার জালে বল পাঠান মেসি। তবে তিনি নিজেই অফসাইডে থাকায় গোল মেলেনি।
পাঁচ মিনিট পর জালে বল পাঠান মার্তিনেস। এবার ভিএআরের সহায়তা নিয়ে অফসাইডের বাঁশি বাজান রেফারি।
অফসাইডের ফাঁদ কেটে বের হতেই পারল না আর্জেন্টিনা। ৩৫তম মিনিটে ফের জালে বল পাঠান মার্তিনেস। এবার অবশ্য আগেভাগেই পতাকা তোলেন লাইন্সম্যান।
অফসাইডের কথা চিন্তা করেই কি-না আক্রমণভাগের খেলোয়াড়রা একটু নিচে নেমে থাকায় এরপর ধার কিছুটা কমে যায় আর্জেন্টিনার। বল নিয়ন্ত্রণে রেখে চেষ্টা চালিয়ে যায় স্কালোনির দল। কিন্তু প্রথমার্ধে আর জালের দেখা পায়নি তারা।
প্রথমার্ধে লক্ষ্যে একটিও শট রাখতে না পারা সৌদি আরব ৪৮তম মিনিটে সমতা ফেরায়। ডি-বক্সে বল পেয়ে আড়াআড়ি শট নেন সালেহ আল শেহরি। স্লাইড করা ক্রিস্তিয়ান রোমেরোর পায়ে লেগে দূরের পোস্ট ছুঁয়ে বল জড়ায় জালে!
ওই ধাক্কা সামাল দেওয়ার আগেই ৫৩তম মিনিটে পিছিয়ে পড়ে আর্জেন্টিনা। বেশ কিছুক্ষণ আর্জেন্টিনার রক্ষণেই ছিল বল। কেউই ক্লিয়ার করতে পারেননি। ডি-বক্সের মাথায় আলগা বল পেয়ে যান যান সেলিম আল দাওয়াসারি। তিন জনকে কাটিয়ে বুলেট গতির শটে সৌদি আরবকে এগিয়ে নেন তিনি।
৬৩তম মিনিটে সমতা ফেরানোর দারুণ সুযোগ একটুর জন্য কাজে লাগাতে পারেননি মার্তিনেস। দুর্দান্ত ক্রসে মাথা ছোঁয়াতে পারেননি ইন্টার মিলান স্ট্রাইকার। পরের মিনিটে গোললাইন থেকে কোনোমতে কর্নারের বিনিময়ে একটি চেষ্টা ব্যর্থ করে দেন সৌদি গোলরক্ষক।
৭২তম মিনিটে দুরূহ কোণ থেকে গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে পারেননি দি মারিয়া। নষ্ট হয় আরেকটি মরিয়া চেষ্টা। দুই মিনিট পর ডি-বক্সের বাইরে এসে দারুণ স্লাইডে সম্ভাব্য একটি আক্রমণ আগেভাগেই শেষ করে দেন সৌদি গোলরক্ষক।
৮৪তম মিনিটে দি মারিয়ার ক্রসে সুযোগ আসে মেসির সামনে। আর্জেন্টিনা অধিনায়কের হেডে খুব জোর না থাকায় কোনো বিপদ ঘটাতে পারেনি।
শেষের দিকে একের পর এক আক্রমণ করে লাতিন আমেরিকার দলটি। কিন্তু কোনো না কোনোভাবে সেগুলো ঠেকিয়ে দেয় সৌদি রক্ষণ। যোগ করা সময়ের দশম মিনিটে হুলিয়ান আলভারেসের দারুণ হেড ঝাঁপিয়ে ফেরান গোলরক্ষক। অবিশ্বাস্য এক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সৌদি আরব।
৩৬ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসানের অভিযানে এসে প্রথম ম্যাচেই থামল আর্জেন্টিনার জয়রথ। রূপকথার এক জয়ে ‘সি’ গ্রুপের লড়াই দারুণ জমিয়ে দিল সৌদি আরব।